ইনসানে কামিল

– ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

দাঁড়ি, গোঁফ রাখার তরিকা

 

দাঁড়ি রাখা আমাদের প্রিয় রাসুলে খোদার (সাঃ) সুন্নত- (সেয়ারে ইসলাম)। আল্লাহর হাবীব বলেছেন-

“যে আমার সুন্নতকে অবজ্ঞা করে সে আমার উম্মত নয়। আমি তার সাফায়াত করবো না।”

তিনি আরো বলেছেন-

“গোঁফকে ছোট করে রাখ (যাতে গোঁফ ভেজানো পানি খেতে না হয়)।”

ক্ষুর বা ব্রেড দিয়ে গোঁফ চেছে না ফেলে প্রতি সপ্তাহে অন্ততঃ একবার কাচি দিয়ে খুব ছোট করে কেটে পবিত্র মাটির নীচে পুতে ফেলা উত্তম।

মনে রাখতে হবে, সুন্নতের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা কুফরী। তাই সাবধান! নবী (সাঃ)- এর উম্মতগণকে আবারো অনুরোধ করছি- সাবধান হোন! এখনই তওবা করে হযরতের এই সুন্নতটিকে পুরা করার নিয়্যত করুন। সুন্নত পুরা করে প্রিয় নবীকে খুশী করুন। দাঁড়ি ফেলতে গিয়ে নবীজির সুন্নতের উপর আর ছুরি চালাবেন না, কাঁচি ধরবেন না, নবীজির কলিজায় আঘাত দেবেন না। লক্ষ্য রাখবেন, আখেরাতের সেই ভীষণ বিপদের দিনে তিনির দয়া হতে, তিনির শাফায়াত হতে যেন কেউ বঞ্চিত না হই।
দাঁড়ি কম করে হলেও এক মুষ্ঠি পরিমাণ বড় রাখতে হবে। এর চাইতে কম রাখা কোন মতেই গ্রহন যোগ্য নয়। দাঁড়ি কেটে ফেলা (এক মুষ্টির কম রাখাও কেটে ফেলার সামিল) বা না রাখা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। এটা বে-দ্বীন বা বে-ঈমানদারদের তারিকা। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)- এর পূর্বে দুনিয়ায় যত নবী ও রাসুল তশরিফ নিয়েছিলেন, যত আসহাব, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং ওলী আউলিয়াগণ দুনিয়া হতে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন তাঁদেরও দাঁড়ি ছিল। দাঁড়ি না রাখা মানেই সকল নবী ও রাসুলগণের সুন্নতের অবমাননা করা, তাঁদের আদর্শের পরিপন্থি কাজ করা।

সব চেয়ে বড় কথা, যে নবীর শাফায়াত ছাড়া উম্মতে মোহাম্মদীর কারোর পক্ষে বেহেশতে যাওয়ার ভাগ্য জুটবে না- তাঁর আদর্শের, তাঁর সুন্নতের উপর কাঁচি চালানো কত বড় অন্যায়, কত বড় নিষ্ঠুরতা, কত বড় বেঈমানী- একটু চিন্তা করলেই তা পরিস্কার হয়ে যাবে!
এরূপ জঘন্য কাজ করার পর আমরা কি করে সেই শেষ বিচারের দিন আল্লাহর দরবারে সেই নবীর সাফায়াত আশা করব?

তাই আসুন, আর দেরি না করে আজই আন্তরিকতার সাথে অতীত কর্মের জন্য তওবা করে ভবিষ্যতে সুন্নতের পাইরুবী করার অঙ্গিকার নিয়ে দুনিয়ার বাকি জীবন সমাপ্ত করি।

টুপী এবং পাগড়ী পড়ার ফজিলত ও মাসআলা

 

মুসলমানের জন্য মাথায় টুপী পরা সুন্নত (সেয়ারে ইসলাম)। পাগড়ী পরাও সুন্নতে জায়েদা। তবে, পাগড়ী পরিধান করে নামাজ পড়লে অধিক (সাতাইশ রাকাতের- হাদিস) সওয়াব পাওয়া যায়।
পাগড়ী ছাড়া শুধু টুপী পড়ে নামাজ পড়া (বা ঈমামতী করা) মাকরূহ নয়। টুপী ছাড়া শুধু পাগড়ী পরে নামাজ পড়লেও নামাজ মাকরূহ হবে না, যদি পাগড়ীর দ্বারা মাথার তালু ঠিকমত ঢেকে যায়। মাথার তালু খোলা থাকলে নামাজ মাকরূহ হবে। (দুররে মোখতার, বেহেশতী জেওর)।

টুপী বা পাগড়ী ছাড়া খোলা মাথায় নামাজ পড়া মাকরূহ। অবশ্য কেউ যদি খোদার সামনে আজিজি এনকেছারী দেখাবার জন্য টুপী বা পাগড়ী ছাড়া নামাজ পড়ে (যেমন হাজীগণ আল্লাহর পবিত্র ঘর তওয়াফ করার সময় করে থাকেন) তবে তার জন্য মাকরূহ হবে না। (দুররে মোখতার)
নামাজের মধ্যে মাথা হতে টুপী পরে গেলে তা তৎক্ষণাৎ এক হাত দিয়ে তুলে মাথায় পরে নেয়া ভাল, কিন্তু যদি তা এক হাত দ্বারা একবারে তুলে মাথায় পড়া না যায়, তবে তা করা যাবে না। (দুররে মোখতার)

মুসলমানগণের জন্য পাগড়ীর নীচে টুপী পরা নবী করিম (সাঃ)-এর সুন্নত। ইহুদী এবং শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরাও পাগড়ী পরিধান করে। কিন্তু টুপী পরে না।
এ ছাড়া, মুসলমান ও ইহুদীদের মধ্যে পাগড়ী পরিধানে তফাৎ হলো এই যে, মুসলমানেরা পাগড়ীর নীচে টুপী পরিধান করে, আর তারা খালি মাথায় পাগড়ী পরিধান করে থাকে। আমরা যদি টুপী ছাড়া পাগড়ী পরি তা হলে তাদের পাগড়ী পড়ার সাথে মিল হয়ে যায় বিধায় কোন কোন আলেমগণ টুপী ছাড়া পাগড়ী ব্যবহারকে মাকরূহ বলে উল্লেখ করেছেন।

মেছওয়াক করা

 

নামাজের পূর্বে অযু করার সময় মেছওয়াক করার জন্য আল্লাহর হাবীব (সাঃ) অত্যন্ত তাকিদ করেছেন। অযুর সুন্নত কাজগুলির মধ্যে মেছওয়াক করার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ফরমায়েছেন-

“মেছওয়াক করে যে নামাজ পড়া হয়, উহা বিনা মেছওয়াকে আদায় করা নামাজের চেয়ে সত্তর গুণ বেশী উত্তম ।”

তিনি আরো বলেন-

“তোমরা মেছওয়াকের প্রতি বিশেষ যত্নবান হও। কারণ উহাতে দশটি উপকরণ নিহিত আছে। যথা :- ১) মুখ পরিস্কার করে ২) ইহা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ ৩) শয়তানকে ক্রোধান্বিত করে ৪) আল্লাহ পাক এবং তাঁর ফেরেশতাগণ মেছওয়াককারীকে পছন্দ করেন ৫) মেছওয়াক দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে ৬) কফ দূর করে ৭) মুখে সুগন্ধি আনয়ন করে ৮) পিত্তকে নষ্ট করে ৯) দৃষ্টি শক্তিকে বৃদ্ধি করে ১০) মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।”

সব চাইতে বড় কথা মেছওয়াক করা নবী করিম (সাঃ)- এর সুন্নত। মৃত্যু শয্যায় তিনি মেছওয়াক চেয়ে নিয়ে মেছওয়াক করেছিলেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, মেছওয়াক করা মোমেনগণের জন্য আল্লাহ ও রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জনের একটি সহজ ও সুন্দর উপায়।

Related posts

Leave a Comment